ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এর বিপ্লবী লাল মোহন সেন

চট্টগ্রাম আস্ত্রাগার লুট মামলার আসামি

১৩১৭ বঙ্গাব্দেন অগ্রাহায়ণ মাসে, ইংরেজি ১৯১০ সালে মুছাপুর গ্রামে বিপ্লবী লালমোহন সেন জন্ম গ্রহণ করেন । পিতার নাম অখিল চন্দ্র সেন । সুদের ব্যবসা করে সেন পরিবার ধনি হয়েছিলন ।শৈশবে  লালমোহন কুতুব উদ্দিন মুনদারের (মজুমদার) বাড়ীর সম্মুখে অবস্থিত প্রাইমারী স্কুলে লেখাপড়া আরম্ভ করেন। এর পর তিনি ১৯২০ সালে মুছাপুর মধ্য ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন।
ঐ সময় তার গৃহশিক্ষক ছিলেন নোয়াখালী জেলার রামপুর গ্রামনিবাসী সতীশ চন্দ্র বর্দ্বন। গিরিশ বাবুর মতো সতীশ চন্দ্র বর্দ্ধনও সন্দ্বীপে শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মধ্য ইংরেজি পরিক্ষায় উত্তির্ন হয়ে লালমোহন ১৯২৪ সালে কার্গিল হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯২৬ সালে নবম শ্রেণীতে অধ্যায়নকালে কার্গিল হাইস্কুলে পরিত্যাগ করেন ।১৯২৮ সালে  চট্টগ্রাম নর্মাল স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের হোস্টেলে  থেকে লালমোনহ পড়ালেখা করেতে থাকেন । এ সময় লালমোহনের সাথে বিপ্লবী আনন্দ গুপ্ত, অনন্ত সিং গনেশ ঘোশ প্রমুখের সাথে পরিচয় ঘটে ।এদের মধ্যে লালমোহন প্রথম বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হন। এরপর লালমোহন পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে বিপ্লবীদের সাথে সম্পূর্ণ ভাবে মিশে যান। লালমোহন ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের জন্য  জেঠা মহাশয়ের বাক্স ভেঙ্গে ১৩০০ (তেরশত) টাকা  ও হোস্টেল সুপারের ঘর  থেকে ৫০০ (পাঁচশত) টাকা এনে দিয়েছিলেন বিপ্লবীদের হাতে  তাদের যাবতীয় খরচের জন্য । তারপর অস্ত্রাগার দখলের দিন ১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল ধূমের কাছে রেলপথ উপড়ে ফেলার দলে তিনি ছিলেন দলনেতা, তার সাথে ছিল সুবোধ মিত্র, সুকুমার ভৌমিক ও সৌমিত্র কিশোর দত্ত চৌধুরী প্রমুখ বিপ্লবী । এ সব বিপ্লবী যুবক চট্টগ্রাম থেকে ৬০ মাইল দূরবর্তী ফেনীর নিকট  নাঙ্গলকোর্ট ও ধূম ষ্টেশনের মধ্যবর্তী  রেললাইন উঠিয়ে ফেলার নির্দেশ লয়ে ঘটনাস্থলের দিকে যাত্রা করেন।  ঠিক নিদিষ্ঠ দিনে ৯টা ৪৫ মিনিটে  বিপ্লবীরা ধূম রেলষ্টেশনে একখানি রেলগাড়ীকে লাইনচ্যুত করে চট্টগ্রামগামী  কলকাতা মেইলের গতিরোধ করে দেয় এবং রেললাইন বিধ্বস্ত করে দেয় । সন্দ্বীপের হুদ্রাখালী/কাটগর গ্রামনিবাসী সৈয়দ আহমদ  দারোগা, সন্দ্বীপ টাউনের ধীরন্দ্র কুমার চৌধুরী’র সহযোগীতায় কলকাতার এক পার্ক হতে গ্রেফতার হন ।

১৯৩২ সালের ১লা মার্চ অস্ত্রাগার দখল মামলার রায় ঘোষিত হয় । রায়ে অন্যান্য আসামীদের সাথে লালমোহনেরও ২৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয়  ও দ্বীপান্তর দেয়া হয় । দন্ডপাপ্ত সমস্ত বন্দীদের সাথে লালমোহনও ১৯৩২ সালের ১৫ আগষ্ট ষ্টীমারযোগে  আন্দামান যাত্রা করেন। আন্দামান দ্বীপের “সেলুলার জেলে”  (প্রতি কয়েকদিনের জন্য এক একটি আলাদা ‘সেল’ অথবা কুঠুরী ঐ জেল ছিল বলে ঐ জেলের নাম সেলুলার জেল হয়েছে ) লালমোহন ও তার সঙ্গীরা বাস করতে থাকেন। এ.কে. ফজলুল হকের  মন্ত্রীত্বের সময় লালমোহন ও তার সঙ্গীদিগকে আন্দামান হতে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে স্থানান্তর করা হয়।  এ স্থান হতে লালমোহন ১৯৪৬ সালের ৩১শে আগষ্ট  মুক্তি লাভ করেন  এবং ০২/০৯/১৯৪৬ইং কলকাতা গমন করেন। কলকতা হতে ২৮/০৯/১৯৪৬ ইং অপরাহৃ ২টার সময় বাড়ীতে পৌঁছেন। লালমোহন কলকাতা থাকতেই সন্দ্বীপের মুছাপুর গ্রামের কিছু অংশে  সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। এই দাঙ্গা বিহার,কলকাতা এবং নোখালির দাঙ্গার পরেই সংঘটিত হয়। দাঙ্গা শুধু মাত্র একদিন ২টার পর কিছু সময়ের জন্য সংঘটিত  হয়েছিলো । পরের দিন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় দাঙ্গাবাজরা আর সুবিধা করতে পারেনি । লালমোহন সেনের উদ্যোগে সন্দ্বীপে ১৯৪৬ সালে হিন্দু মুসলিম “শান্তি-কমিটি” গঠিত হয়েছিলো এবং লালমোহন এর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০অক্টোবর ১৯৪৬ সালের ভোর ৫টায় লালমোহন যখন চট্টগ্রামে আসার জন্য ভাগিনা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট অমলেন্দু দাস, কলেজের ছাত্র নিরদ বরণদাস ও আরও দুই জন সঙ্গীসহ যাত্রা করে ধোপার হাঁটের কাছে এসে উপস্থিত হয়েছেন, এমন সময় হঠাৎ একদল উম্মদ জনতা তাহাদিগকে আক্রমন করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে।
লালমোহন সেনের মৃত্যুরপর বিশ্বকবি  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য সেক্রেটারী ডাঃ অমিয় চক্রবর্ত্তী (১৯০১-১৯৮৭) ও বাংলার বিপ্লবী কন্যা বীনাদাস তাঁর চারজন বিপ্লবী  সঙ্গীসহ সন্দ্বীপ আগমন করেন। বীনাদাস কলকতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে বাংলার লাট স্যার ষ্টানলি জ্যাকসনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করায়, বিচারে তাঁর ১২বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয়।


বইঃ সন্দ্বীপের কৃতী সন্তান যারা আজ নেইলেখকঃ এ বি এম ছিদ্দীক চৌধুরী

সংগ্রহঃ মোবারক হোসেন সনি ভূঁইয়া

Comments

Popular posts from this blog

কবি,সাহিত্যিক ও লেখকদের জন্ম ও মৃত্যু দিবস

বাংলার আদি কবি মীননাথ